রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প কাহিনী - ভালোবাসা অপরাধ

আমরা সবাই গল্প করতে অনেক ভালোবাসি. আর আপনাদের কথা চিন্তা করে আজকের এই গল্পটি লেখা. তো চলুন দেরি না করে ভালোবাসার এই সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর গল্পটি পড়ে নেওয়া যাক।
                                                                             
গল্প

   

গল্পের নাম: ভালোবাসা অপরাধ

লেখক: মোঃ ইশতিয়াক আহাম্মেদ

পর্ব ১

এক গ্রামে অপরূপ সুন্দরি এক মেয়ে থাকত, যার নাম ছিল খুশি। খুশির সৌন্দর্যের কারনে তার গ্রামের এবং স্কুলের অনেক ছেলেরা তার সাথে প্রেম করার চেষ্টা করত। ঐ ছেলেদের মধ্যে একজন ছিল বিপ্লব। তবে বিপ্লব, খুশির স্কুল বা গ্রামের কেউ ছিল না, সে ছিল তার পাশের গ্রামের এক বকাটে ছেলে। বিপ্লব কুষ্টিয়া তে ডিপ্লোমাতে পড়াশোনা করত।

একদিন বাসে করে কুষ্টিয়া থেকে বাড়ি আসার সময় বিপ্লব খুশিকে রাস্তা পার হতে দেখে, আর প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যায় বিপ্লব। অবশ্য খুশির মত মায়াবি চেহারার মেয়েকে দেখলে যেকোনো ছেলেই প্রেমে পড়তে বাদ্ধ। খুশির মায়াবী চোখের দিকে তাকালে যে কোন ছেলেই নিজের হুশ হারিয়ে ফেলতে পারে।

তো সেদিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরও খুশিকে খুজে পায় না বিপ্লব। আর সেদিন থেকেয় সুরে হয় বিপ্লবের অস্থিরতা। সারারাত সে খুশির কথায় ভেবে যায়, খুশির মায়াবি চোখ গুলার কথা মনে পড়লেয় যেন বিপ্লবের সব কিছু উথাল পাথাল হয়ে যায় চারিদিকে যেন শুধু খুশি হয়ে দেখতে পায়। বিপ্লবের মাথায় তখন শুধুমাত্র খুশির চিন্তায় ঘুরপাক করতে থাকে।

এমন ভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর, একদিন বিপ্লব যখন বন্ধুদের সাথে একটা স্কুলের পাশে আড্ডা দিচ্ছিল ঠিক সে সময় খুশি তার বান্ধবীদের সাথে স্কুলে যাচ্ছিল। আর তখনই বিপ্লব আবার খুশিকে দেখতে পায়। খুশিকে দেখা মাত্রই বিপ্লবের শরীরটা শীতল হয়ে ওঠে, মনে মনে সে ভেবে নেই যে আজকে সে বলবে, খুশিকে সে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে।

তবে খুশির সামনে গিয়েই বিপ্লব যেন বোবার মত হয়ে যায়, তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে,কণ্ঠস্বর কাঁপতে শুরু করে, অনেক চেষ্টার পরও, খুশিকে তার মনের কথা বলতে পারে না।

তারপর থেকে প্রতিদিন বিপ্লব খুশিকে অনুসরণ করতে শুরু করে, খুশির বাড়ি কোথায়, খুশির পরিবারে কে কে আছে, খুশি কিসে পড়ে সব কিছুর তথ্য বের করে ফেলে বিপ্লব। এরপর থেকে কোন ছেলে যদি খুশিকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করে অথবা তাকে কোনভাবে কষ্ট দিয়ে থাকে তাহলে বিপ্লব সেই ছেলেকে ধরে প্রচুর মারধর করে আর সবাইকে বলে ওটা তোদের ভাবি ওর দিকে বোনের নজরে তাকাবি।

এদিকে খুশিও বুঝতে পারে যে, একটা ছেলে তার জন্য অন্য ছেলেদের সাথে মারপিট করছে, প্রতিদিন তার পিছন পিছন ঘুরছে। হয়তো খুশিও মনের অজান্তেই বিপ্লবকে ভালোবেসে ফেলে। তাইতো সে তার এক বান্ধবীকে দিয়ে বিপ্লবকে জানাই, এতই যখন আমাকে ভালবাসে তাহলে মনের কথাটা আমার কাছে এসে বললেই তো হয়, অন্য ছেলেদের মারপিট করে তো কোন লাভ নেই।

এই কথা শোনার পর বিপ্লব আর স্থির থাকতে পারে না, সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় যে, আজকে সে তার মনের কথা খুশি কে জানিয়ে দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ, বিপ্লব খুশির পছন্দের লাল গোলাপ নিয়ে চলে যায় খুশিকে প্রপোজ করতে। খুশির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে, খুশি তুমি কি আমাকে পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ বানাতে সাহায্য করবে।

খুশি আমতা আমতা করে বলে, কি বলছেন এগুলা? বিপ্লব বলে, হ্যাঁ আমি হতে চাই পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ, কারণ তোমার মত মেয়ে যাকে ভালোবাসবে তার থেকে সুখী মানুষ পৃথিবীতে আর কেউ হতে পারে না। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি খুশি, তুমি কি আমাকে ভালবাসবে? আমি সারা জীবন তোমাকে নিজের করে আগলে রাখতে চাই। তুমি কি আমার সারা জীবনের পথ চলার সাথী হবে ?

খুশি বিপ্লবের কথাগুলো শুনে একপ্রকার স্ট্যাচু হয়ে যায়, একটা মানুষ কিভাবে এত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে সেটা বিপ্লবকে না দেখলে হয়তো খুশি কোনদিন বুঝতো না। তাই তো নিজের অজান্তেই কখন খুশির হাতটা বিপ্লবের দেওয়া গোলাপের কাছে চলে গেছে সে নিজেও জানে না।

আজকের দিনটা হয়তো খুশি কোনদিনও ভুলবে না, তার জীবনের অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত ছিল আজকে।

সেইদিন থেকেই খুশি আর বিপ্লব হয়ে যায় ভালবাসার নৌকার দুই মাঝি। তাদের জীবন অনেক সুখের কাটছিল। খুশি ভাবতেও পারিনি তার জীবনে এমন কেউ আসবে, যে তাকে এতটা ভালোবাসায় ভরিয়ে দিবে, হয়তো বিপ্লবের মতো কোনো ভালোবাসার মানুষের জন্যই অপেক্ষা করছিল সে এতদিন। দিনে দিনে খুশি যেন বিপ্লবের প্রেমে অন্ধ হয়ে যাচ্ছিল, খুশির কাছে মনে হতো বিপ্লব যেন পৃথিবীর সর্বোত্তম পুরুষ, তার চরিত্রে কোন দাগ নেই জীবনের সকল পরিস্থিতিতে যেন তার হাতটা শক্ত করে ধরে রাখা যায়।

কিন্তু একদিন একটি মেয়ে খুশির কাছে এসে বলে, আমার নাম মালিহা তুমি কি বিপ্লব কে চেনো? খুশি মাথা নেড়ে উত্তর দেয় হ্যাঁ চিনি। তখন মালিহা বলে, আমি জানি তোমার আর বিপ্লবের মধ্যে কি সম্পর্ক চলছে, আজ থেকে ছয় মাস আগে আমার আর বিপ্লবের মধ্যে ঠিক একই সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, আর সেই সম্পর্কে চিহ্ন আমার পেটে রয়েছে। হ্যাঁ তুমি ঠিকই শুনেছ আমি বিপ্লবের বাচ্চার মা হতে চলেছি।

কথাগুলো শুনে খুশির পায়ের তলার মাটি যেন হারিয়ে যেতে লাগে, সবকিছু উলটপালট লাগতে শুরু করে। তবে এক মুহূর্তের জন্য খুশি ঘাবরে গেলেও মালিহার কথা খুশি আর বিশ্বাস করে না। খুশি মালিহাকে বলে, আমার বিপ্লব কোনদিন এরকম কিছু করতে পারে না, তার মত ভাল মানুষ এই পৃথিবীতে খুব কমই আছে, সে কখনোই তার বিপ্লবকে অবিশ্বাস করতে পারবে না।

মালিহা খুশিকে অনেক বোঝায় কিন্তু খুশি কোন ভাবেই বিশ্বাস করে না যে বিপ্লব এমন কিছু করতে পারে। তাইতো মালিহা এক পর্যায়ে খুশির উপর রেগে গিয়ে সেখান থেকে চলে যায় এবং যাওয়ার সময় বলে আমি তোমার ভালোর জন্যই এখানে এসেছিলাম, বিপ্লব আমাদের সম্পর্কটা এখন অস্বীকার করে, আর আমার কাছে এমন কোন প্রমাণ নাই যার মাধ্যমে আমি সবাইকে বলতে পারব যে বিপ্লবই আমার সন্তানের বাবা হতে চলেছে। 

কিন্তু তোমার কাছে এসেছিলাম এই ভেবে যে, আমার মতো আর কোন মেয়ের জীবন যেন বিপ্লবের মতো খারাপ ছেলে নষ্ট না করতে পারে। কিন্তু তুমি ওর প্রেমে অন্ধ হয়ে আছো,তোমার হিতাহিত জ্ঞান বলে আর কিছুই নেই। আমার দায়িত্বটা আমি পরিপূর্ণ করে গেলাম বাকিটা তোমার উপর...।। কথাগুলো বলার পর মালিহা চলে যায়।

সেদিনের ঘটনাটা বিপ্লব জানার পর খুশিকে ফোন দেয় এবং খুশিকে জানাই ওই মালিহা মেয়েটা একটা দুশ্চরিত্রা, টাকার জন্য নাকি ওই মেয়ে সবকিছু করতে পারে।যেহেতু বিপ্লবের বাবার অনেক টাকা তাই টাকার লোভে নাকি মালিহা বিপ্লবকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আর খুশিকে সে জানাই, তুমি যেন এরকম আলতু ফালতু মেয়েদের কথা বিশ্বাস করবা না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি এবং তোমাকেই বিয়ে করবো।

কথাগুলো শোনার পর খুশি বলে তুমি আমাকে যখন এতই ভালোবাসো, ভালোবাস, তখন আমাকে বিয়ে করে নাও। তখন বিপ্লব সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায় এবং বলে আমি বিয়ের জন্য রাজি তুমি তোমার বাড়িতে আমার ব্যাপারে বলো। যখন খুশি তার বাড়িতে বিপ্লবের কথা জানায় তখন তার বাড়ির লোক বিপ্লবের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানে যে ছেলেটা একদম ভালো না তার ব্যবহার, চালচলন, চরিত্র কোনটাই সুবিধার নয়। কিন্তু এই কথাগুলোর একটিও খুশি বিশ্বাস করতে চায় না। তাইতো সে তার বাবা-মা, পরিবার সবাইকে ফেলে দিয়ে বিপ্লবের বাড়িতে চলে যায়।

বিপ্লবের বাড়িতে যাওয়ার পর বিপ্লব তার মা বাবাকে ডেকে বলে আমি আর খুশি একে অপরকে অনেক ভালোবাসি, আমরা বিয়ে করতে চাই। একমাত্র ছেলের এরকম কথা শুনে বিপ্লবের বাবা-মাও আর না করতে পারে না। তারা খুশির সাথে তাদের ছেলের বিয়েটা দিয়ে দেয়।

খুশি এখন নতুন বধু বেসে বিপ্লবের ঘরে বসে আছে। কালো রঙের একটি লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে খুশি, তাকে যেন ফুটফুটে আকাশ থেকে নামা কোন হুর-পরীর মত লাগছে। যে কেউ দেখলে হয়তো পাগল হয়ে যাবে, এমন সুন্দর্য আজ খুশির উপর ফুটে এসেছে। কিন্তু খুশির মুখে এখন আনন্দের কোন ছোঁয়া নেই, সে ভাবছে অন্য কথা, সে কি ভুল কিছু করেছে তার মা-বাবার কথা না শুনে ? তার বাবা মা কি তাকে কোনদিন ক্ষমা করবে ?

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খুশির চোখ যায় বিপ্লবের ঘরে রাখা একটা ছোট্ট বাক্সর দিকে। বাক্সটির ভিতর থেকে একটি ছবির অংশ দেখা যাচ্ছিল, আর ছবিটি দেখে খুশির একটু কৌতুহল সৃষ্টি হয় এবং সে ছবিটি দেখার জন্য বক্সটা হাতে নিয়ে খুলতে লাগল।

বাক্সটি খোলা মাত্রই খুশি দেখতে পেল বাক্সের মধ্যে কিছু চিঠি এবং একটি ডায়েরি রয়েছে এবং ডাইরির ভিতরে রয়েছে দুইটা ছবি এবং ছবিতে বিপ্লব এবং মালিহাকে অনেক ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখা যাচ্ছে।

ছবিটা দেখা মাত্রই খুশির হাত থেকে বাক্সটা পড়ে গেল ঠিক তখনই বিপ্লব রুমে প্রবেশ করে দেখলে যে খুশি দাঁড়িয়ে আছে আর খুশির পায়ের নিচে বাক্সটি পড়ে আছে.......................


(..........চলবে...........)

লেখকের কথা

যেহেতু মানুষ মাত্রই ভুল তাই উপরের  গল্পটি লিখতে গিয়ে যদি কোথাও ভুল ত্রুটি করে ফেলি তাহলে আমাকে ক্ষমা করবেন এবং এ বিষয়ে আপনার যদি কোন মতামত থাকে থাকে, তাহলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন অথবা আমার সাথে যোগাযোগ করে আমাকে মেসেজের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাকে সঠিক তথ্য এবং  আনন্দ দেওয়া টাই আমার প্রধান কাজ। আর এরপর কোন বিষয়ে গল্প লিখলে আপনারা খুশি হবেন সেটাও জানাতে পারেন।এই গল্পটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অন্যদের মাঝেও শেয়ার করে দিতে পারেন। এই পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url