এইডস এর লক্ষণ ও প্রতিকার - বাংলাদেশে এইডস পরিস্থিতি

প্রিয় বন্ধুরা আপনি কি জানেন এইডস রোগটি এবং এইডস রোগের লক্ষণ কি? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাকে জানাবো এইডস এর লক্ষণ ও প্রতিকার। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক এইডস রোগের লক্ষণ ও এ রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় গুলি।
                                                                    
এইডস

ভুমিকা

বিশ্বে যে কয়েকটি ঘাতক ব্যাধিতে মানুষ অধিক সংখ্যায় আক্রান্ত হচ্ছে এর মধ্যে এইডস অন্যতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এইডস শনাক্ত হয়। বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক বা নিরাময়ব্যবস্থা থাকলেও এইডস সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করতে পারে এমন ওষুধ এখনও আবিষ্কার হয় নি। এইডস হলো এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমণের সর্বশেষ পর্যায়। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অতি সহজেই অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয় এবং কোনো চিকিৎসায় ভালো হয় না। এইচআইভি ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে দেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয় বলে এর একমাত্র পরিণতি মৃত্যু। তো চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক এই এইচআইভি ও এইডস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি এবং এগুলো থেকে প্রতিকার পাওয়ার উপায় কি?

এইডস এর লক্ষণ সমূহ

এইডসের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই। তবে, এইডস আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য যে রোগে আক্রান্ত হয়, সে লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
  • শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া;
  • দুই মাসের অধিক সময় ধরে শরীরের জ্বর থাকা
  • দীর্ঘদিন ধরে শুকনো কাশি থাকা;
  • দেড় থেকে দুই মাসের বেশি সময় ধরে পাতলা পায়খানা হওয়া 
  • শরীরের নানা অংশে ছত্রাক জনিত সংক্রমনের দেখা পাওয়া
  • লসিকা গ্রন্থি (Lymph Gland) ফুলে যাওয়া।
এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে সাধারণত উপরে বর্ণিত একাধিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে। এ জন্য তার এইডস হয়েছে নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া যাবে না। তবে কোনো ব্যক্তির এসব লক্ষণ দেখা দিলে বিলম্ব না করে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করে এইচআইভি সংক্রমণের বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।

মহিলাদের মধ্যে এইচআইভি লক্ষণ

যেহেতু প্রতিকারবিহীন এ রোগের পরিণতি ভয়াবহ, তাই বিশেষ করে অল্প বয়সী মেয়েদেরকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি থেকে জানা যায় যে নতুন এইচআইভি আক্রান্তদের অর্ধেকই ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী। এই বয়সী মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এর প্রধান কারণগুলো হচ্ছে-
  • বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে মেয়েদের দুর্বল অবস্থান
  • এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব
  • নারী-পুরুষের বৈষম্যের কারণে নারীর নিগৃহীত হওয়া
  • অনৈতিক ও অনিরাপদ শারীরিক * সম্পর্ক স্থাপনে মেয়েদের বাধাদানের ক্ষমতার অভাব (
  • মেয়েদের বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য।

এইডস এর প্রতিকার কি

এইচআইভি ও এইডস প্রতিরোধে করণীয়-
  1. অপরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ করা যাবে না
  2. অন্যের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার করা যাবে না
  3. অন্যজনের ব্যবহার করা রেজার বা ব্লেড নিজে ব্যবহার করা যাবে না
  4. অনিয়ন্ত্রিত, অনিরাপদ ও অনৈতিক  শারীরিক সম্পর্ক করা যাবে না
  5. অপারেশনে পরিশুদ্ধ যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে।
  6. যদি কোন শিশুর মা এইচআইভি জীবাণু বা এইডস রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে সেই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে না.

এইচআইভি প্রতিরোধ

এছাড়াও এইচআইভি সংক্রমণের কারণগুলো জেনে এ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা এইডস প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিতে পারি। এইডস প্রতিরোধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা হলো-

  • ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার বর্জন: এইডস ও এইচআইভি এর  ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে হলে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণগুলো বর্জন করতে হবে।
  • আবেগ প্রশমন: প্রধানত কৌতূহল ও আবেগের বশবর্তী হয়ে কিশোর-কিশোরীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। অনেক সময় মা-বাবার শাসনের ফলে রাগ বা অভিমান করে তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে বসে। বড়দের সাথে বিশেষ করে বাবা মার সাথে ভালোভাবে কথা বললে এ বিষয়ে সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পাওয়া যায় এবং নিজের মনও হালকা হয়।
  • ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান: ঝুঁকিপূর্ণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য 'না' বলার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কিশোর-কিশোরীরা অনেক ক্ষেত্রে অনাকাঞ্জিদত বা অনৈতিক প্রস্তাবে চক্ষু লজ্জায় বা ভয়ে সরাসরি 'না' বলতে পারে না। তাই কীভাবে 'না' বলতে হবে তা জানতে ও শিখতে হবে। নিজেকে দৃঢ়চেতা হতে হবে এবং বন্ধুত্ব বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার যুক্তি দেখাতে হবে এবং প্রস্তাবের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে হবে। সর্বোপরি 'না' বলার কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
  • ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন ও রীতিনীতি মেনে চলা: নেশা করা বা মাদকাসক্ত হওয়া ও অনৈতিক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন কোনো ধর্ম বা সমাজ অনুমোদন করে না।সামাজিকভাবে এগুলো অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ।সেজন্য ধর্মী নিয়ম মেনে চললে এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।
  • এইচআইভি ও এইডস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি: এইচআইভি ও এইডসের ভয়াবহতা সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা আবশ্যক। এ উদ্দেশ্যে র‍্যালির আয়োজন, পত্রিকায় প্রচার, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, নাটক ও সংগীত প্রভৃতির মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার একই রঙের পোশাক প্রভৃতিতে সজ্জিত হয়ে শ্লোগান সহকারে র‍্যালিতে অংশ নিলে তা সহজেই দর্শকের নজর কাড়ে এবং এইডস বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশে এইডস পরিস্থিতি

এইচআইভি ও এইডস সমগ্র বিশ্বে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর বিস্তার আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। পূর্ব ইউরোপ ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে এর দ্রুত বিস্তার ঘটেছে। এশিয়া মহাদেশে ভারত ও মিয়ানমারে এইডসের ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি। চীন, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও নেপালে এর বিস্তার ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এইডস আক্রান্ত দেশসমূহে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক যায়। 

অনৈতিক জীবনযাপনের ফলে তাদের এইডসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। এই সকল শ্রমিকেরা অনেক সময় এইচআইভি ভাইরাস নিজেদের শরীরে বহন করে দেশে ফিরে আসছে।এছাড়া আমাদের দেশে অনিয়ন্ত্রিত মাদকের ব্যবহার, দারিদ্র্য, অনৈতিকতা, অশিক্ষা,অসচেতনতা ,  প্রভৃতি কারণে যাদের বয়স ২৫ বছরের কম  কিশোর- কিশোরী/ যুবক-যুবতীদের মধ্যে এইডস সংক্রমণের ব্যাপকতা মহামারী আকারে পৌঁছে গিয়েছে।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আজকের এই পোষ্টের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল এইডস এর লক্ষণ ও প্রতিকার এবং এইচআইভি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার। ইতি মধ্যেই আমরা আপনাদেরকে এইডস ও এইচআইভি রোগের লক্ষণ সংগ্রহ এবং এই রোগ গুলো থেকে বাঁচার উপায় জানিয়েছি। আশা করব এই পোস্ট থেকে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন এবং আপনার প্রিয়জনদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবেন। আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন যাতে অন্যরাও এরকম উপকারী মূলক তথ্য পেয়ে নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে পারে। আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url