স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক - ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি
প্রিয় বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক। আমরা অনেকেই ধর্মপান হলেও স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক সম্পর্কে অবগত নয়। তাই আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাকে স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক প্রমাণ দিব সেই সাথে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষেও যুক্তি দেওয়া হবে।
স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক
স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। স্রষ্টা জীবকূলের কল্যাণে এ সুন্দর প্রকৃতি সৃষ্টি করেছেন। সমুদ্র, নদী, পাহাড়-পর্বত, চন্দ্র-সূর্য, গাছ-পালা, জীবজন্তু প্রভৃতি তাঁর সৃষ্ট প্রকৃতির অংশ। সৃষ্টার এই সৃষ্টির মধ্যেও রয়েছে গভীর সম্পর্ক। সূর্যের আলোয় পৃথিবী আলোকিত হয়। আলোর উপস্থিতিতে গাছ-পালা খাবার গ্রহণ করে। প্রাণীকূল এই আলোয় জীবনধারণের কাজে মেতে ওঠে। প্রকৃতির প্রাণচাঞ্চল্যের মূলেই রয়েছে এই সূর্যের আলো।
এভাবে প্রকৃতির প্রতিটি উপাদানের সাথেই রয়েছে পারস্পরিক সম্পর্ক। আর এ সবকিছুর সম্পর্ক সৃষ্টিকর্তাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রকৃতির সব উপাদানের মধ্যে ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং পারস্পরিক সম্পর্কের মূলেই রয়েছেন তিনি। স্রষ্টার সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা তাঁকে উপলব্ধি করতে পারি। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সকল সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং ভালোবাসা ও সম্মান করা।ঈশ্বর যে সৃষ্টি করেন তা তাঁর নিজের প্রয়োজনে নয়। তিনি নিজের আনন্দের জন্য সৃষ্টি করেন। একেই বলে তাঁর লীলা।
তিনি মহাবিশ্বের আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র-নদী, বনভূমি, গাছ-পালা ও বিচিত্রসব জীবজন্তু সৃষ্টি করে তাঁর লীলার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আমরা সহজেই তা অনুভব করতে পারি। স্রষ্টা অনাদি ও অনন্ত। কিন্তু সৃষ্টির আদি ও অন্ত আছে। অর্থাৎ সৃষ্টির উদ্ভব ও ধ্বংস, জন্ম ও মৃত্যু আছে।
ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি দাও
সকল জীবের মধ্যেই স্রষ্টার অস্তিত্ব রয়েছে। তিনি সকল জীব সৃষ্টি করেছেন এবং জীবদেহেই অবস্থান করেন। তাই আমরা প্রতিটি জীবকেই ঈশ্বরজ্ঞানে পূজা করি। যেমন: আমরা তুলসীগাছকে পূজা করি আবার গাভীকেও মাতৃরূপে পূজা করি। স্রষ্টার এই সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করি। এ প্রসঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন-
'বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর,
জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।'
অর্থাৎ জীবের মধ্যে এক ঈশ্বর বহুরূপে বিরাজ করেন। তাই ঈশ্বরকে বাইরে খোঁজার প্রয়োজন হয় না এবং জীবকে সেবা করলেই ঈশ্বরকে সেবা করা হয়।
ঈশ্বর সর্বত্রই রয়েছেন এবং তিনি জীবদেহে আত্মারূপে বিরাজ করেন। জীবদেহে ঈশ্বর আত্মরূপে অবস্থান করেন বলেই জীবদেহ সচল। সুতরাং জীবদেহের সচলতা নির্ভর করে ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর। ঈশ্বর ছাড়া জীবদেহের অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না। আত্মাই জীবদেহের প্রাণ। জীবদেহ থেকে আত্মার সরে যাওয়াটাই হল জীবদেহের মৃত্যু। এ অবস্থায় জীবদেহের মধ্যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকে না। আত্মা নিরাকার। তাই আমরা আত্মাকে দেখতে পাই না কিন্তু তার উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারি। হিন্দুধর্ম বিশ্বাস করে, আত্মার মৃত্যু হয় না, অবস্থান ত্যাগ করে অন্য অবস্থানে আশ্রয় নেয়। অর্থাৎ আত্মার মৃত্যু নেই।
আত্মাই ঈশ্বর। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে, মানুষ যেমন পুরাতন কাপড় পরিত্যাগ করে নতুন কাপড় পরিধান করে, আত্মাও তেমনি পুরাতন দেহ পরিত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে। আত্মার এ পরিবর্তনের মধ্যে লুকিয়ে আছে জীবের জন্ম ও মৃত্যু। প্রতিটি জীবদেহে তাঁর উপস্থিতি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টির উপর তাঁর কর্তৃত্বের কথা, সৃষ্টির মধ্যে তাঁর অস্তিত্বের কথা। জীবের অস্তিত্ব স্রষ্টা বা ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল।
বেদ ও এর গুরুত্ব
বেদের শিক্ষা ও গুরুত্ব
বেদ পাঠ করলে স্রষ্টা, বিশ্বপ্রকৃতি ও জীবন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ হয়। প্রত্যেকটি বেদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ঋগ্বেদ সংহিতা পাঠ করলে আমরা বিভিন্ন দেব-দেবীর সম্পর্কে জানতে পারি এবং এর মাধ্যমে দেব-দেবীর স্তুতি বা প্রশংসা করতে শিখি। অগ্নি, ইন্দ্র, ঊষা, রাত্রি, বায়ু প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতা উপলব্ধি করা যায়। তাঁদের কর্মচাঞ্চল্যকে আদর্শ করে, আমরা আমাদের জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চেষ্টা করব।
যজ্ঞের মন্ত্রের সংগ্রহ হচ্ছে যজুর্বেদ। এ থেকে জানতে পারি সেকালে উপাসনা পদ্ধতি কেমন ছিল। যজুর্বেদ অনুসরণে বিভিন্ন সময়ে যজ্ঞানুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষপঞ্জি বা ঋতু সম্পর্কে ধারণা জন্মে। বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন সময়ব্যাপী যজ্ঞানুষ্ঠান করা হতো। যজ্ঞের বেদি নির্মাণের কৌশল থেকেই জ্যামিতি বা ভূমি পরিমাপ বিদ্যার উদ্ভব ঘটেছে। সামবেদ থেকে সেকালের গান ও রীতি সম্পর্কে জানতে পারি।
অথর্ববেদ হচ্ছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল। এখানে নানা প্রকার রোগব্যাধি এবং সেগুলোর প্রতিকারের উপায় স্বরূপ নানা প্রকার লতা, গুল্ম বৃক্ষাদির বর্ণনা করা হয়েছে। আয়ুর্বেদ নামে চিকিৎসা শাস্ত্রের আদি উৎস এই অথর্ববেদসংহিতা। বলা যায়, অথর্ববেদ থেকে জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। সুতরাং সমগ্র বেদ পাঠে পরমাত্মা, বৈদিক দেব-দেবী, যজ্ঞ, সঙ্গীত, চিকিৎসাসহ নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করে জীবনকে সুন্দর, সুস্থ ও পরিপাটি করে তোলা যায়। আর এজন্যই এ গ্রন্থ আমাদের প্রত্যেকের পাঠ করা অবশ্য কর্তব্য।
শেষ কথা
আমাদের আজকের এই পোষ্টের মূল বিষয় ছিল স্রষ্টা ও সৃষ্টির সম্পর্ক নিয়ে। আমরা ইতিমধ্যে আপনাদেরকে স্রষ্টা ও সৃষ্টি এর সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছি। আশা করব এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন যাতে অন্যরাও এই পোস্টটি পেতে পারেন। ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url