রেড ক্রিসেন্ট এর সাতটি মূলনীতি গুলা কি কি জেনে নিন

প্রিয় বন্ধুরা আপনি কি রেড ক্রিসেন্ট এর মূলনীতি গুলো কি কি সেগুলো সম্পর্কে জানেন ? অথবা আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন সম্পর্কে কি কিছু জানেন? যদি না জানে তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন রেড ক্রিসেন্ট ও রেড ক্রস সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন এই পোস্টের মাধ্যমে।
                                                                     
রেড ক্রিসেন্ট এর সাতটি মূলনীতি

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন

১৮৫৯ সালের ২৪শে জুন উত্তর ইতালির সলফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মাত্র ১৬ ঘণ্টার এই যুদ্ধে প্রায় চল্লিশ হাজার সৈন্য হতাহত হয়। আহত সৈন্যরা বিনা চিকিৎসায় যুদ্ধক্ষেত্রেই উন্মুক্ত প্রান্তরে মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল। সেই সময় সুইজারল্যান্ডের এক যুবক জিন হেনরি ডুনান্ট ব্যবসাসংক্রান্ত ব্যাপারে ফ্রান্সে তৃতীয় নেপোলিয়নের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন। 

যুদ্ধক্ষেত্রের এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং তিনি আশেপাশের গ্রামবাসীকে ডেকে এনে আহতদের তাৎক্ষণিক সেবা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের জীবনরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরাই রেড ক্রসের প্রথম স্বেচ্ছাসেবক, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মহিলা। 

ডুনান্ট এই যুদ্ধের ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় স্মৃতি ও তার প্রতিকারের জন্য ১৮৬২ সালে 'এ মেমোরি অব সলফেরিনো' নামে একটি বই রচনা করেন। বইটির মূল কথা ছিল 'আমরা কি পারিনা প্রতিটি দেশে সেবামূলক  এমন একটি সংস্থা গড়ে তুলতে, যারা শত্রু ও মিত্র উভয় পক্ষের আহতদের সেবা করবে।

' ১৮৬৩ সালে ৯ ই ফেব্রুয়ারি জিন হেনরি ডুনান্ট চারজন জেনেভাবাসীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন, যা 'কমিটি অব ফাইভ' ফর্মা-৩, শারীরিক শিক্ষা ও নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এই কমিটির নাম পরিবর্তিত হয়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি নামে পরিচিত হয়। একই বছর এই কমিটি ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করে। 

সম্মেলনে জুনান্টের মহতি প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয় এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে রেড ক্রস জন্মলাভ করে। জিন হেনরি ডুনান্ট ১৮২৮ সালের ৮ই মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯১০ সালের ৩০শে অক্টোবর ৮২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। জুনান্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য ৮ই মে তার জন্মদিবস, এই দিনটি বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস হিসাবে পালিত হয়।

রেড ক্রিসেন্ট এর সাতটি মূলনীতি

ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ১৯৬৫ সালে ২০তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে  রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের  নিম্নলিখিত সাতটি মৌলিক নীতি প্রদান করা হয়েছিলঃ
  • মানবতা- মানুষের মধ্যে কোনরকম ভেদাভেদ ছাড়াই যুদ্ধক্ষেত্রের সকল আহতদের সাহায্য করা।
  • একতা- কোনো দেশে কেবল একটিমাত্র রেড ক্রস বা রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি থাকবে। দেশের সর্বত্র এর মানবসেবামূলক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত থাকবে।
  • নিরপেক্ষতা- সকল মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করার লক্ষ্যে এই আন্দোলন কোন ধরনের পক্ষপাতিত্ব করে না।
  • সার্বজনীনতা- সমমর্যাদাসম্পন্ন এবং পরস্পরকে সাহায্যের জন্য সমান দায়িত্ব ও কর্তব্যের অধিকারী জাতীয় সোসাইটিসমূহকে নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট বিশ্বব্যাপী একটি সার্বজনীন আন্দোলন।
  • স্বাধীনতা- এই আন্দোলন স্বাধীন। মানবসেবামূলক কাজে নিজ নিজ দেশের আইনের অধীনে সরকারের সহায়ক হিসাবে কাজ করে।
  • পক্ষপাতহীনতা- এই আন্দোলনটি ধর্মীয় বিশ্বাস, গোত্র,জাতি , শ্রেণি বা নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে বিপদে পড়া ব্যক্তিকে সাহায্য করে।
  • স্বেচ্ছামূলক সেবা- একটি স্বেচ্ছাসেবামূলক ত্রাণ সংগঠন হিসাবে এই আন্দোলন কোনো প্রকার স্বার্থ বা লাভ অর্জনের উদ্দেশ্যে কাজ করে না।

শেষ কথা

প্রিয় বন্ধুরা আজকের আমাদের এই পোষ্টের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল রেড ক্রিসেন্ট এর সাতটি মূলনীতি এবং রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলন সম্পর্কে। আমরা ইতিমধ্যে আপনাদেরকে এ বিষয় গুলা জানিয়েছি। যদি এই পোস্টটা আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন যাতে অন্যরাও রেড ক্রিসেন্ট সম্পর্কে জানতে পারে। আমাদের ওয়েব সার্টিফিকেট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url