চোখ উঠার কারণ ও ঘরোয়া সমাধান

প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চলেছি চোখ ওঠা রোগের কারণ এবং চোকোটা রোগের ঘরোয়া সমাধানের উপায়। চোখ ওঠা রোগটা অনেক কমন একটি রোগ এবং এটির প্রতিকার বা প্রতিরোধ ও অত্যন্ত জরুরী। তাই আপনি যদি চোখ উঠার কারণ ও চোখ উঠার ঘরোয়া সমাধান সম্পর্কে জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
                                                                                
চোখ উঠা

ভুমিকা

চোখ ওঠা বাConjunctivitis রোগ অনেকের মাঝে দেখা দিচ্ছে। এটা সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের কারণে হয় এবং সহজেই একের থেকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে পরে। রোগটির প্রতিরোধ ও ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে সহজ ভাষায় পোস্টটি করেছি। আশা করি আপনার ও আপনার প্রিয়জনকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করবে। তো চলুন দেখে নেওয়া যাক চোখ উঠার কারণ ও ঘরোয়া সমাধান।

চোখ উঠলে কি কি খাওয়া যাবে না

যদি কোন ব্যক্তির চোখ ওঠে তাহলে তার যেই খাবারগুলি পরিহার করা উচিত সেগুলি হল: পুইশাক,ইলিশ, চিংড়িমাছ মাছ,মিষ্টি কদু,সীম ,বেগুন, মসুরের ডাল ইত্যাদি খাবার । এ সকল খাবার এড়িয়ে চলার কারণ হলো এই সকল খাবার গ্রহণের পর চোখের চুলকানি বাড়িয়ে দিতে পারে এর ফলে আপনার চোখ ওঠার সমস্যাটা আরো বেড়ে যেতে পারে তাই যদি আপনার চোখ উঠে তাহলে এই খাবারগুলো পরিহার করা উচিত।

চোখ উঠা সারতে কত দিন লাগে?

চোখটা রক্তিম মূলত বেশি স্থায়ী নয় সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এর একটি ভালো হয়ে যায় তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগতে পারে। যদি এর থেকে বেশি সময় লাগে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত যাতে কোন বড় সমস্যা না ঘটে যায়।

চোখ উঠা কি ছোঁয়াচে

চোখ ওঠা বা Conjunctivitis মূলত একটি ছোঁয়াচে রোগ। চোখ ওঠা ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিসপত্র এবং রোগীর সংস্পর্শে থাকলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। সেজন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে রোগের সেবা করা সত্ত্বেও এই রোগ যেন ছড়িয়ে না পড়তে পারে।

চোখ উঠা সংক্রমণ থেকে বাচার উপায়

কোন একজনের চোখ উঠলে দেখা যায় বাসার সবার চোখ উঠছে তাই এই পোস্টের মাধ্যমে জানাবো চোখ উঠা থেকে সুরক্ষিত থাকতে কি করবেন। আর যদি উঠে যাই তাহলে ঘরোয়া চিকিৎসা কি? মাত্র তিনটা কাজের মাধ্যমে এই ছড়ানো ঠেকানো যায়.
  • যার চোখ উঠছে তার রুমাল গামছা তোয়ালে বালিশ এগুলো অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না, আলাদা রাখবেন। গরম পানিতে ডিটারজেন্ট সাবান দিয়ে বালিশের কভার, বিছানার চাদর, গামছা, তোয়ালে,মুখে ব্যবহার করা কোন কাপড় যেমন রুমা এগুল, ধুয়ে নিবেন। আর ধোয়া শেষ করে ভালো করে নিজের হাত দুটো ধুয়ে নেবেন।
  • চোখ উঠলে হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় মুখ আর নাক ডেকে নিতে হবে টিস্যু দিয়ে। ব্যবহারের পর টিস্যুটা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিবেন।
  • হাত ধোয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে চোখের ড্রপ অথবা মলম লাগানোর আগে পরে এবং চোখ পরিষ্কার করার আগে পরে তার আশেপাশে অনুরাগী হলেও নিয়মিত হাত ধুতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে চোখে সে যেন হাত না দেয়, কোন কারণে যদি চোখে হাত দিতে হয় তাহলে তার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে না হলে সহজেই ইনফেকশন রোগী থেকে তার আশেপাশের মানুষে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অনেকের মনে করেন যে. চোখ উঠা ব্যক্তির চোখের দিকে তাকালে নাকি চোখ উঠে। এটা ম্পূর্ণ ভুল। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই চোখ ওঠা রোগের দিকে তাকালে কোন অসুবিধা নাই। কিন্তু তার আশেপাশে গেলে কিছু সতর্কতা মানতে হবে। যেগুলো এতক্ষণ বললাম নিয়মিত হাত ধোয়া, রোগীর ব্যবহৃত জিনিস ব্যবহার না করা, চোখে হাত না দেয়া এসবের মাধ্যমে আপনি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

চোখ উঠলে ঘরোয়া চিকিৎসা

এবার কথা বলব চোখ উঠলে কি কি করার মাধ্যমে ঘরে বসেই একটু আরাম পেতে পারেন। প্রথমেই বলবো এমন কিছু উপায় যেগুলোর মাধ্যমে আপনি ঘরোয়া সমাধান পেতে পারেন এবং তারপরে ওষুধ নিয়ে আলোচনা করব।
  • এক টুকরা পরিষ্কার কাপড় পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে সেটা দিয়ে চোখের দিতে পারেন। একটু ঠান্ডা পানি হলে ভালো হয়। কয়েক মিনিট ধরে ভেজা কাপড় দিয়ে আলতো করে চাপ দিবেন এতে চোখে আরাম পাবেন।
  • হাত দিয়ে চোখ চুলকাবেন বা কুচাবেন না, এতে সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে, চোখের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাহলে চোখ বুঝবেন কি করে ? পানি ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নেবেন তারপর সেই কুসুম গরম পানিতে পরিষ্কার কাপড় বা তুলা ভিজিয়ে আলতোভাবে চোখের পাপড়ি গুলো পরিষ্কার করে নেবেন। এতে করে চোখে জমা পূজ আর ময়লাপরিষ্কার হয়ে যাবে। অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে দুই চোখের জন্য আলাদা আলাদা কাপড় তুলা ব্যবহার করতে হবে। চোখ মোছা শেষ করার পর কাপড় ধুয়ে নিবেন,পারলে হালকা গরম পানি ও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিবেন। আর যদি তুলা ব্যবহার করে থাকেন সেটা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিবেন। আর সব শেষ করে নিজের হাতটা ভাল করে ধুয়ে নিবেন।

চোখ ওঠার ড্রপ

এক ধরনের চোখের ড্রপ রয়েছে যেটি ব্যবহার করলে চোখের অস্বস্তি, খচখচে ভাব, আঠালো ভাব এগুলো কমাতে সাহায্য করতে পারে ।এগুলোকে বলে লুব্রিকেটিং অয়েল। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই আপনি নিজেই ফার্মেসীতে গিয়ে কিনতে পারবেন।

অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ সাধারণতঃ চোখ উঠা সাধারণত নিজে নিজেই সেরে যায়, ওষুধ লাগে না। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ইনফেকশন যদি খুব গুরুতর হয় অনেক অসুস্থ থাকে বা কোন রোগটা যদি অনেক দ্রুত সারানোর প্রয়োজন পড়ে সে ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক ড্রপ এর প্রয়োজন পড়ে। তবে এই ড্রপটা আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিনতে হবে। আপনি যদি নিজে নিজে ফার্মেসিতে গিয়ে এই রোগের জন্য এন্টিবায়োটিক ড্রপ নেন তাহলে হয়তো আপনি বিপদে পড়তে পারেন তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পর এই অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপটি ব্যবহার করবেন। কারণ ভাইরাস এবংএলার্জির কারণে চোখ লাল হতে পারে, পানি পড়তে, পারে, তখন কিন্তু আর কোন কাজ করবে না।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে বুঝবেন এটা ভাইরাসের জন্য হয়েছে নাকি ব্যাকটেরিয়ার জন্য হয়েছে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হলে সাধারণত চোখ থেকে পুঁজের মত বের হয়, সকাল বেলা চোখের পাতা আরেকটার সাথে লেগে থাকে।

ভাইরাস ইনফেকশন হলে সাধারণত পুঁজ বের হয়না, চোখ লাল হয়, পানি পড়ে,জ্বালাপোড়া করে। আর ভাইরাস ইনফেকশন এ তখন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কোন কাজ হয় না।আর ইনফেকশন ছাড়াও এলার্জির কারণে চোখ লাল হয়, পানি পড়ে।

চোখ উঠা করনীয়

যারা চোখে মেক-আপ প্রসাধনী এবং কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন।চোখ সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এগুলো ব্যবহার করবেন না এবং চোখ সেরে যাওয়ার পরে নতুন প্রসাধনী এবং নতুন কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করবেন যাতে * কন্টাক্ট লেন্স বা প্রসাধনী থেকে আবার ইনফেকশন না হয়।

আমাদের শেষ কথা

এতক্ষণে বুঝে গেছেন চোখ উঠলে ডাক্তারের কাছে সাধারণত যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না নিজে নিজেই সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়া প্রয়োজন। কারণ গুরুতর কিছু হয়ে থাকতে পারে অথবা চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। যদি দুই সপ্তাহ পর ও রোগ না শারে, যদি চোখে ব্যথা হয়, চোখ লাল হয়ে যায় বা চোখে দেখতে সমস্যা হয় যেমন কাঁপা কাঁপা দৃষ্টি ,ঝাপসা দৃষ্টি ইত্যাদি দেখলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া ভালো। আশা করব এই আর্টিকেলটি আপনাদের পছন্দ হয়েছে যদি আর্টিকেলটা আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন যাতে অন্যরাও এই রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url