ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয় - কিডনি নিয়ে তথ্য

যে সকল রোগীর কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে তাদের ডায়ালাইসিস করার প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে আমরা অনেকেই জানিনা এই ডায়ালাইসিস কি এবং এটা করতে কত টাকা খরচ হয় এবং কিভাবে করা উচিত? এ সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আজকের এই পোস্ট লেখা। এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা ডায়ালাইসিস সম্পর্কে সকল ধারনা পেয়ে যাবেন।
                                                                                            
বৃক্কের কাজ কি

বৃক্কের কাজ কি

একজন স্বাভাবিক মানুষ প্রতিদিন প্রায় 1500 মিলিলিটার মূত্র ত্যাগ করে। মূত্রে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি নাইট্রোজেনঘটিত পদার্থ থাকে। এগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এসব অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে অপসারণে বৃক্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

বৃক্ক বা কিডনির ভিতরের নেফ্রন একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে মূত্র উৎপন্ন করে। উৎপন্ন মূত্র সংগ্রাহী নালিকার মাধ্যমে বৃক্কের পেলভিসে পৌঁছায় এবং পেলভিস থেকে ইউরেটারের ফানেল আকৃতির প্রশস্ত অংশ বেয়ে ইউরেটারে প্রবেশ করে। ইউরেটার থেকে মূত্র মূত্রথলিতে আসে এবং সাময়িকভাবে জমা থাকে। মূত্র দিয়ে মূত্রথলি একটি নির্দিষ্ট পর্যায় পর্যন্ত পূর্ণ হলে মূত্র ত্যাগের ইচ্ছা জাগে এবং মূত্রথলির নিচের দিকে অবস্থিত ছিদ্রপথে মূত্রনালির মাধ্যমে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে। 

এভাবে বৃক্ক বা কিডনি মানবদেহ থেকে ক্ষতিকর নাইট্রোজেন জাতীয় পদার্থসহ বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণ করে।বৃক্ক মানবদেহে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াও মানবদেহের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, পানি, অম্ল এবং ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।

ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়

বৃক্ক সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার নাম হলো ডায়ালাইসিস। সাধারণত 'ডায়ালাইসিস মেশিনের' সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এ মেশিনের ডায়ালাইসিস টিউবটির এক প্রান্ত রোগীর হাতের কব্জির ধমনির সাথে এবং অন্য প্রান্ত ঐ হাতের কব্জির শিরার সাথে সংযোজন করা হয়। 

ধমনি থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস টিউবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। এর প্রাচীর আংশিক বৈষম্যভেদ্য হওয়ায় ইউরিয়া, ইউরিক এসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। পরিশোধিত রক্ত রোগীর দেহের শিরার মধ্য দিয়ে দেহের ভিতর পুনরায় প্রবেশ করে। এখানে উল্লেখ্য, ডায়ালাইসিস টিউবটি এমন একটি তরলের মধ্যে ডুবানো থাকে, যার গঠন রক্তের প্লাজমার অনুরূপ হয়। 
এভাবে ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ) বাইরে নিষ্কাশিত হয়। তবে এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।এ প্রক্রিয়ায় ডায়ালাইসিস সেন্টারের বিশেষ তত্ত্বাবধানে, কৃত্রিম কিডনি (artificial kidney) বা ডায়ালাইজারের সাহায্যে রক্ত থেকে শরীরের বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি) ও অতিরিক্ত পানি অপসারণ করা হয় । ডায়ালাইসিস করার ফলে শরীরে পটাসিয়াম, সোডিয়াম ও বাইকার্বনেটসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্টোলাইটের মাত্রা বজায় থাকে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য কর

ডায়ালাইসিস কত ধরনের

ডায়ালাইসিস মূলত ২ ধরনে
  • হেমোডায়ালাইসিসদ
  • পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস

হেমোডায়ালাইসিস

সাধারনত একটি মেশিনের মাধ্যমে হেমোডায়ালাইসিস করা হয়। মেশিনটি শরীরের বাইরে স্থাপিত থাকে এবং এর মধ্যকার ফিল্টারের মধ্য দিয়ে রক্ত প্রবাহিত করা হয়। পরিশোধন শেষে রক্ত পুনরায় শরীরে ফেরত পাঠানো হয় । সাধারণত সপ্তাহে তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত হিমোডায়ালাইসিস করতে হয়। প্রতি সেশনে কতটা সময় করতে হবে তা নির্ভর করে রোগীর কিডনির অবস্থার ওপর। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর হিমোডায়ালাইসিস বাড়িতেও করা সম্ভব। যেমন—ডায়ালাইসিস করার সময় যে রোগী সুস্থ থাকে বা অবস্থা পরিবর্তিত হয় না, যখন রোগীর অন্য কোনো অসুখ না থাকে।

পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস

এই প্রক্রিয়ায় রোগীর শরীরের মধ্যেই রক্ত পরিশোধন করা হয়। একধরনের বিশেষ তরল পেটের ভিতরে রাখা হয় যেটি বর্জ্য পদার্থ গ্রহণ করে নেয় এবং নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া শেষে তরল বের করে নেয়া হয়। পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস সাধারনত বাসায় করা হয় ।পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস আবার দুই রকম। কন্টিনিউয়াস অ্যাম্বুলেটরি পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বা সিএপিডি। কন্টিনিউয়াস সাইক্লিক পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস বা সিসিপিডি। 

প্রথমটি প্রতিদিন কয়েকবার করতে হয়। খুবই সহজ। রোগী বা রোগীর সঙ্গের লোকই করতে পারেন। কোনো যন্ত্রপাতির সাহায্য লাগে না। দ্বিতীয়টি সাধারণত রোগী যখন ঘুমায় তখন করতে হয়। সাধারণত প্রতি রাতেই করতে হয়। সময় লাগে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। এটা করতে ছোট একটি মেশিনের সাহায্য লাগে।

কিডনির বিকল্প নয়

ডায়ালাইসিস করে রক্ত থেকে দূষিত কিছু পদার্থ বের করা যায়, কিন্তু এটা কিডনির অন্যান্য কাজ করতে পারে না। ডায়ালাইসিসের রোগীদের পানি ও তরল পানে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। সব ধরনের খাবার খাওয়া যায় না। কিছু ওষুধও সেবন করতে হয়। তবে ডায়ালাইসিসের রোগীরা অন্যান্য স্বাভাবিক কাজ করতে পারে। নারী হলে সাধারণত গর্ভধারণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে আপনি যদি এই অবস্থায় গর্ভধারণ করেন তাহলে আপনাকে বেশি বেশি ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে নিজের রক্তের পদার্থ মুক্ত রাখতে হবে.

ডায়ালাইসিসের খরচ

ডায়ালাইসিসে ভালো থাকতে হলে সপ্তাহে দুইবার প্রয়োজন হয়। প্রতি ডায়ালাইসিসে গড়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে খরচ পড়ে ৫০০-৭০০ টাকা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খরচ পড়ে অনেক। এখানে প্রতি ডায়ালাইসিসের খরচ ২০০০-৫০০০ টাকার মতো খরচ হয়।

ডায়ালাইসিস নিয়ে ভুল ধারণা

অনেকেরই ধারণা আছে, ডায়ালাইসিস একবার করানো হলে রোগীকে আর বাঁচানো যায় না বা রোগী বাঁচে না। অথচ নিয়মিত ডায়ালাইসিস করানোর ফলে রোগী সুস্থ থাকে। তবে যারা অনিয়মিত ডায়ালাইসিস করেন, তাদের বিভিন্ন রকমের শারীরিক জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। যেমন—ক্ষুধামান্দ্য, রক্তস্বল্পতা, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

মূত্রথলি সুস্থ রাখার উপায়

শিশুদের টনসিল এবং খোসপাঁচড়া থেকে সাবধান হওয়া প্রয়োজন; কেননা সেখান থেকে কিডনির অসুখ হতে পারে। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণ ইত্যাদির দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করা এবং ব্যথা নিরাময়ের ঔষধ যথাসম্ভব পরিহার করা প্রয়োজন। পরিমাণমতো পানি পান করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিয়ম মেনে জীবন যাপন করতে হবে।

আমাদের শেষ কথা

ডায়ালাইসিস কতদিন পর পর করতে হয় এবং কিডনি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আজকে এই পোস্টের মধ্যে। তাছাড়া এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে ডায়ালাইসিস এর গুরুত্ব এবং ডাইলসিসের সকল তথ্য দেয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করব এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন যাতে অন্যরাও এরকম তথ্যাবুল পোস্ট পেতে পারে।আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url