কুকুর কামড়ালে কি ভ্যাকসিন দিতে হয় জেনে নিন বিস্তারিত

আপনি কি জানেন যে কুকুরে কামড় দিলে বা আচর দিলে তৎখানাত অবস্থায় কি করতে হয় ? তাছাড়া আপনি কি জানেন যে কুকুর কামড়ালে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়? যদি আপনি এগুলো না জেনে থাকেন তাহলে এই পোস্টটা আপনার জন্য। এই পোস্টের ভেতরে আমরা কুকুর কামড়ালে কি কি করতে হয় এবং কি কি ওষুধ সেবন করতে হয় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
                                                                      
কুকুর

ভূমিকা

সাধারণত পোষা প্রাণীরা তাদের মনিবকে কামড়ায় না। কিন্তু কখনো কখনো কুকুর বা বিড়াল তাদের যারা আদর করেন, খাওয়ান, কোলে নেন এবং সাথে নিয়ে হাঁটতে বের হন তাদেরকেও আঁচড় দিতে পারে। এই ছোট খাট আঘাতগুলো অ্যালকোহল বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করলেই ভালো হয়ে যায়। যদি দুর্ঘটনাবশত কুকুর কামড় দেয় এবং ত্বক ছিলে যায় এবং রক্ত বের হয় তাহলে ইনফেকশন হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।👇
কুকুর আচর দিলে কি করতে হবে
১। প্রথমেই রক্তপাত বন্ধ করতে হবে।

২। কুকুরটিকে ধরার চেষ্টা করুন। কুকুরটি যদি কারো পোষা হয় তাহলে তার ঠিকানা নিয়ে রাখুন এবং তাদেরকেও সতর্ক থাকতে বলুন।

৩। পাঁচ মিনিট যাবৎ ক্ষতটি ধুয়ে নিন। এক্ষেত্রে কলের পানি ব্যবহার করাই ভালো। যদি কলের পানি সহজলভ্য না হয় তাহলে আক্রান্ত স্থানটি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পানি বার বার পরিবর্তন করে দিন। এক্ষেত্রে গ্লাবস পড়ে নেয়া ভালো। এভাবে আক্রান্ত স্থানটি ধুয়ে ফেললে কুকুরের লালা সম্পূর্ণ দূর হবে।

৪। যদি কুকুরের কামড়ের ফলে হালকা কেটে যায় বা আঁচর লাগে তাহলে পরিষ্কার একটি কাপড় দিয়ে সরাসরি চাপ দিলে রক্তপাত বন্ধ হবে। সম্ভব হলে আক্রান্ত স্থানটি হার্টের চেয়ে উপরের দিকে উঠিয়ে রাখুন। এর ফলে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

৫। জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে ব্যান্ডেজ করে নিন এবং ঐ দিনই ২৪ ঘন্টার মধ্যে ডাক্তারের সাথে দেখা করুন।

৬। যদি আক্রান্ত ব্যক্তি গত ৮ বছরে টিটেনাসের ইনজেকশন নিয়ে না থাকেন তাহলে দ্রুত টিকা নিতে হবে। যেকোন ধরণের কামড়ের ফলেই টিটেনাস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

উষ্ণ রক্তের প্রাণীর মধ্যে জলাতঙ্কের ভাইরাস আছে কিনা তা শুধু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। যদিও কিছু লক্ষণ প্রাণীর মধ্যে জলাতঙ্কের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে যেমন- 👇
  • বন্য পশু দৌড়াতে দৌড়াতে আপনার কাছে আসলে।
  • পশুটির মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকলে এবং তার জিভ ঝুলে থাকলে।
  • পশুটির শ্বাস নিতে সমস্যা হলে।
  • যদি বন্য পশুটি হঠাৎ করে কারোর উপর ঝাপিয়ে পড়ে।
প্রাথমিক অবস্থায় র‍্যাবিস চিহ্নিত করা যায় না। কিন্তু কিছু প্রাণী অন্যদের তুলনায় জলাতঙ্ক প্রবণ হয়। যদি কোন কুকুর, বাদুর, শেয়াল, ইঁদুর অথবা কাঠ বিড়ালি আপনার সামনে বা কাছাকাছি আসে তাহলে যত দ্রুত এবং যত চুপিসারে এদের সামনে থেকে চলে আসাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে, এটা করার কারণ হলো কুকুর যাতে ভয় না পায় কারণ কুকুরটি যদি ভয় পেয়ে যায় বা রেগে যায় তাহলে তার উপর হামলা করতে পারে।

👉 হালকা আচরের ক্ষেত্রে টিকা নেয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়। কুকুরের কামড় যদি খুব বেশি মারাত্মক হয় তাহলে অ্যান্টি-র‍্যাবিস ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

👉 প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায় যে ডাক্তার ক্ষতটি সেলাই করা এড়িয়ে যান, যদিনা সেটি চেহারা বা কোন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে হয়ে থাকে।

👉 যদি পোষা প্রাণী কামড় দিয়ে থাকে তাহলে টিকার ৩ টি ডোজ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে প্রথম দিন ১ টি টীকা নিলে দ্বিতীয় টিকাটি নিতে হবে ৩ দিন পরে এবং ৭ দিন পরে তৃতীয় টিকাটি নিতে হবে ।

👉 যদি পথের কোন ক্ষিপ্র কুকুর কামড় দেয় সেক্ষেত্রে ৫ বা ৭ টি ইনজেকশন নিতে হবে। টিকার তৃতীয় ডোজ নেয়ার ১ সপ্তাহ পরে নিতে হবে এই ইনজেকশন। মূলত এই ইনজেকশন দেয়া হয় ইমিউনিটিকে উন্নত করার জন্য এবং ইনফেকশনের ঝুঁকি কমানোর জন্য ।

জলাতঙ্ক থেকে মুক্ত থাকার সঠিক উপায় হচ্ছে টিকা নেয়া এবং ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইনজেকশন নেয়া। যেহেতু জলাতঙ্ক ভাইরাসজনিত রোগ তাই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল লোশন ব্যবহার করে কোন উপকার পাওয়া যায়না। ইনফেকশন যেন না বারে সেজন্য অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়াও প্রয়োজন। যদি সময় মত চিকিৎসা করা না হয় তাহলে কুকুরের কামড়ের ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাছাড়া জলাতঙ্ক নিরাময় করা যায়না। তাই উপসর্গের তীব্রতা বুঝা গুরুত্বপূর্ণ এবং চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে চিকিৎসককে চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দিন।

কুকুর কামড়ালে কি ভ্যাকসিন দিতে হয়

কুকুর এরকামড় যদি গভীর হয় বা যদি রক্ত বের হয় তবে, ক্ষতস্থানের পাশে রেইবিজ ইমিউন গ্লবিউলিন বা আরআইজি ভ্যাকসিন দিতে হয়। পাশাপাশি অ্যান্টি রেইবিজ ভ্যাকসিনও দিতে হবে। তবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে  বুকের উপর আঁচড়ের বা কামড়ের দাগ দেখা যায়।

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

সাধারণত কুকুর কামড়ানোর ১০ দিন পর জলাতঙ্কের প্রথম লক্ষণগুলো দেখা যাই। তাই যে কোন ভাবে লক্ষণ প্রকাশের পূর্বে চিকিৎসা শুরু করতেই হবে।লক্ষন নিরভর করে কামড়ের ধরন, স্থানের ওপর।এটা হতে পারে ৪ দিন থেকে ১ বছর। তবে ২০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই জলাতঙ্কের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ৭০% জলাতঙ্কে আক্রান্ত রোগি কুকুর কামড়ের দিন থেকে শুরু করে ৫৯ দিনের ভিতরে মারা যায় ।প্রথমতঃ ২- ১০ দিনের মধ্যে – সাধারণ জ্বরের মত, পা ম্যাজ ম্যাজ করা, মাথা ব্যথা, অবসাদ, বমিভাব, খিদের অভাব, জ্বর ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। ।এরপরই দেখা দেয় মারাত্মক লক্ষণ যার নাম জ্বল+আতঙ্ক = জলাতঙ্ক

জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ

  1. কামড়ের জায়গায় ব্যথা ও চিনিচিন করে
  2. জ্বর, ঢোক গিলতে ব্যথা ও খিঁচুনি হয়৷
  3. পানি দেখলে ভয় পায়৷ বা পানি খেতে চায় না
  4. খুব ঘন চটচটে লালা ঝরে
  5. শান্ত থাকতে থাকতে হঠাত্‌ রেগে যায়
  6. পরে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় এবং পক্ষাঘাত দেখা দেয়

আমাদের শেষ কথা

আজকের এই পোস্টটি ছিল কুকুরের কামড় এবং জলাতঙ্ক রোগের বিভিন্ন রকম লক্ষণ এবং সেগুলোর প্রতিকার নিয়ে। আর আমরা এতক্ষনে সকল বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি।আমাদের উপদেশ থাকবে যে সব সময় সতর্ক থাকবেন এবং যদি আপনাদের কুকুরে কামড়ে দেয় তাহলে অবশ্যই সঠিক ডাক্তারের পরামর্শে কোনো ওষুধ সেবন করবেন। আশা করি আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি উপকৃত হবেন এবং যদি আপনাদের এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে দিবেন যাতে অন্যরাও এরকম তথ্যবহুল পোস্ট সম্পর্কে জানতে পারে। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url